যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার লাল তালিকা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
সরকারিভাবে দেয়া তথ্যানুযায়ী দেশে করোনার সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে শনাক্তের হার পাঁচের কাছাকাছি। যার দরুন পাঁচমাস পর যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার লাল তালিকা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুক্রবার এক টুইট বার্তায় এ তথ্য জানান যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া মুনা তাসনিম। রাষ্ট্রদূত তার দেয়া টুইটে উল্লেখ করেন, লাল তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম সরিয়ে নেয়ার এ সিদ্ধান্ত আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টা থেকে কার্যকর হবে। ওই সময়ের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে ভ্রমণকারীদের ১০ দিন হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না। তবে কেউ যদি এর আগেই যুক্তরাজ্যে যেতে চান, তাহলে তাকে লাল তালিকাভুক্ত দেশের জন্য নির্ধারিত সমস্ত নিয়ম মানতে হবে। জানা গেছে, বাংলাদেশের সাথে আরও সাতটি দেশ ভ্রমণ নিষেধজ্ঞার লাল তালিকা থেকে মুক্তি পাচ্ছে। এই দেশগুলি হচ্ছে- তুরস্ক, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, মিশর, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া ও ওমান। এসব দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের আর দশ দিনের হোটেল কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক থাকবে না। তবে এদেরকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের বাসভবনে বা অন্য কোথাও দশ দিনের কোয়ারেন্টিন করতে হবে। এছাড়া তাদের জন্য ব্রিটেনে পৌঁছানোর দ্বিতীয় দিনে এবং অষ্টম দিনে দুদফা পিসিআর পরীক্ষার বাধ্যবাধকতাও থাকবে। লাল তালিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে এতদিন ব্রিটেনে ভ্রমণে গেলে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলক দশ দিনের হোটেল কোয়ারেন্টিন ও পিসিআর পরীক্ষা বাবদ ২২৮৫ পাউন্ড ব্যয় করতে হতো। বাংলাদেশী টাকায় যা ছিল প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার সমপরিমাণ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফর করেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, তার এই সফরে তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করেছিলেন বাংলাদেশকে এই লাল তালিকা থেকে সরিয়ে নিতে। তিনি বলেন, সুখবর! ব্রিটিশ সরকার আমাদের অনুরোধে বাংলাদেশকে রেড থেকে অ্যাম্বারে নিয়ে এসেছে। এছাড়া আগামী ৪ অক্টোবর থেকে সবুজ ও অ্যাম্বার তালিকাভুক্ত দেশগুলোর জন্য ব্রিটেন ভ্রমণ আরো সহজ হচ্ছে। তখন এসব দেশ থেকে যারা ব্রিটেন ভ্রমণে যাবেন, তাদের দুই ডোজ ভ্যাক্সিন নেয়া থাকলে ব্রিটেনে আসার আগে আর পিসিআর টেস্ট করতে হবে না। এমনকি ব্রিটেনে পৌঁছানোর দুদিন পর যে পিসিআর টেস্ট করার শর্ত রয়েছে, সেটাও প্রযোজ্য হবে না তাদের জন্য, পরিবের্তে তাদের জন্য থাকবে দ্রুত ও সস্তার করোনভাইরাস পরীক্ষা। যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের ক্ষেত্রে লাল তালিকাভুক্ত দেশগুলোর অধিকাংশ মানুষই যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না। যাদেরকে বিশেষ বিবেচনায় প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে, তাদেরকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেদের খরচে ১০ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিন ও দু' দফা কোয়ারেন্টিন করতে হবে, একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির জন্য এ বাবদ খরচ হবে ২ হাজার ২৮৫ পাউণ্ড। তবে লাল তালিকায় থাকা দেশগুলো থেকে ফিরলে যেমন বাধ্যতামূলকভাবে হোটেল কোয়ারেন্টিন করার নিয়ম রয়েছে, অ্যাম্বার তালিকার দেশগুলো থেকে ফিরলে সেরকম কড়াকড়ি নেই। তবে যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ নির্দেশিকায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশই এখন অ্যাম্বার তালিকার অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ এরকম ক্ষেত্রে নাগরিকরা হোটেলে কোয়ারেন্টিন না করে বাড়িতেও কোয়ারেন্টিন করতে পারেন। এছাড়া অ্যাম্বার তালিকায় থাকা দেশগুলো থেকে ফেরার সময় দুই ডোজ ভ্যাক্সিন না দেয়া যাত্রীদের পিসিআর টেস্টের সার্টিফিকেট (পূর্ববর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করা) না আনলে জরিমানা গুনতে হতে পারে। যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জন্য আইনত এসব দেশে ভ্রমণের সুযোগ থাকলেও সরকার এই মুহূর্তে নাগরিকদের এই দেশগুলোতে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করছে।